বাংলাদেশে দর্শনীয় স্থান

 

০১। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

ইতিহাস

কক্সবাজার নামকরণ হয় ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামে। তিনি তখন আরাকান শরণার্থীদের পুনর্বাসনের দায়িত্বে ছিলেন। স্থানীয়রা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই জায়গার নাম দেয় Coxs Bazar সেই সময় থেকেই এ স্থানটি ধীরে ধীরে বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নেয়। স্বাধীনতার পর থেকে সরকার এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে

ভূগোল

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হলো বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত প্রায় ১২০ কিলোমিটার লম্বা। এটি বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। সৈকতের বালু নরম, ঢেউ নিয়মিত ও শান্ত। ইনানী, হিমছড়ি, কলাতলি, লাবণী, মহেশখালী দ্বীপ ইত্যাদি জায়গাগুলো কাছাকাছি থাকায় ভ্রমণকারীরা সহজেই ঘুরে আসতে পারেন

কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যেতে চাইলে কয়েকটি উপায় রয়েছে

·        বিমান: ঢাকা থেকে প্রতিদিন বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলে (সময় ১ ঘণ্টা)

·        বাস: ঢাকা থেকে শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, স্ক্যানিয়া, এনা, গ্রীনলাইন ইত্যাদি বাস যায় (সময় ১০-১২ ঘণ্টা)

·        ট্রেন: ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ চালু হয়েছে (সময় ৮-৯ ঘণ্টা)

কোথায় থাকা যায়

কক্সবাজারে হাজারো হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে

·        বাজেট হোটেল (১,০০০ - ২,০০০ টাকা) - যেমন শ্যামলী, আল-ইকরা

·        মিড-রেঞ্জ হোটেল (৩,০০০ - ৬,০০০ টাকা) - হোটেল সী গাল, হোটেল কক্স ইন

·        লাক্সারি রিসোর্ট (১০,০০০+ টাকা) - হোটেল সী পার্ল, হেরিটেজ, হোটেল দ্য কক্স টুডে

কী খাওয়া যায়

·        সীফুড - রূপচাঁদা ভাজি, লবস্টার, কোরাল মাছ, চিংড়ি

·        স্থানীয় খাবার - বাঁশকল্লা, শুঁটকি মাছের ভর্তা, নারকেল পানি

·        রেস্টুরেন্ট - ঝাউতলা, কলাতলি ও লাবণী এলাকায় অসংখ্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে

কী কী করবেন

·        সমুদ্র সৈকতে সানসেট ও সানরাইজ দেখা

·        ইনানী ও হিমছড়ি ভ্রমণ

·        জেট স্কি, ঘোড়ায় চড়া, বিচ বাইকিং

·        মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণ ও বৌদ্ধ মন্দির দেখা

·        শপিং - হস্তশিল্প, মুক্তার মালা, শুঁটকি মাছ কেনা

সতর্কতা

·        সাগরে অতিরিক্ত ভেতরে না যাওয়া

·        স্থানীয় গাইড ছাড়া দূরবর্তী দ্বীপে যাওয়া থেকে বিরত থাকা

·        হোটেল বুকিং আগে থেকে নিশ্চিত করা

·        প্লাস্টিক বা আবর্জনা সৈকতে না ফেলা

স্থানীয় সংস্কৃতি

কক্সবাজারের মানুষ মূলত ব্যবসা ও পর্যটন নির্ভর। এখানে রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষও বাস করে, যাদের সংস্কৃতি ভিন্নধর্মী রাখাইনদের পোশাক, বৌদ্ধ মন্দির এবং ঐতিহ্যবাহী উৎসব পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়


০২। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

ইতিহাস

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। স্থানীয় ভাষায় একে নারকেল জিঞ্জিরা বলা হয়। প্রাচীনকালে আরব বণিকরা সমুদ্রপথে এখানে আসত এবং বাণিজ্য করত। পরে ব্রিটিশ আমলে দ্বীপটির নাম দেওয়া হয় St. Martins Island এটি মূলত জেলেপল্লি হিসেবে গড়ে উঠেছিল, যেখানে স্থানীয়রা মাছ ধরা, নারকেল চাষ ও শুঁটকি মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে

ভূগোল

·        সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত

·        এটি বঙ্গোপসাগরের বুকে প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি ছোট দ্বীপ

·        দ্বীপটি টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি

·        দ্বীপের দক্ষিণ অংশকে বলা হয় ছেঁড়াদ্বীপ, যা মূল দ্বীপ থেকে জোয়ার-ভাটার সময় আলাদা হয়ে যায়

·        এখানে প্রচুর প্রবাল, সামুদ্রিক মাছ, নারকেল গাছ ও বিরল সামুদ্রিক কচ্ছপ পাওয়া যায়

কীভাবে যাওয়া যায়

সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে আগে ঢাকা থেকে টেকনাফ যেতে হয়

·        ঢাকা কক্সবাজার: বাস (হানিফ, সৌদিয়া, শ্যামলী, গ্রীনলাইন), বিমান (US-Bangla, Novoair, Biman Bangladesh)

·        কক্সবাজার টেকনাফ: লোকাল বাস বা মাইক্রোবাসে (সময় ২-৩ ঘণ্টা)

·        টেকনাফ সেন্ট মার্টিন: শীতকালে (নভেম্বর - মার্চ) জাহাজ ও ট্রলার চলে। জনপ্রিয় জাহাজ হলো Keari Sindbad, Atlantic, LCT Kutubdia ইত্যাদি। ভ্রমণের সময় প্রায় ২ ঘণ্টা

কোথায় থাকা যায়

দ্বীপে অনেকগুলো হোটেল ও কটেজ রয়েছে, তবে সিজন (ডিসেম্বরফেব্রুয়ারি) এ অগ্রিম বুকিং করা জরুরি

·        বাজেট হোটেল (১,০০০ - ২,০০০ টাকা): Samudra Kutir, Saint Martin Eco Resort

·        মিড - রেঞ্জ (৩,০০০ - ৫,০০০ টাকা): Blue Marine Resort, Coral View Resort

·        লাক্সারি (৬,০০০ + টাকা) Ocean Paradise Resort & Spa (শাখা), Dream Night Resort

কী খাওয়া যায়

সেন্ট মার্টিন মানেই সীফুডের স্বর্গ

·        লবস্টার, কোরাল মাছ, রূপচাঁদা, কাচকি মাছের ভর্তা

·        নারকেল পানি, নারকেল দিয়ে রান্না করা স্থানীয় খাবার

·        শুঁটকি মাছ, যা দ্বীপের বিশেষ পরিচিতি দ্বীপের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে সিজনভেদে টাটকা মাছ ভাজা বা গ্রিল পাওয়া যায়

কী কী করবেন

·        সমুদ্রের নীল পানি ও সাদা বালির সৈকতে হাঁটাহাঁটি করা

·        ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ (হেঁটে বা নৌকায় যাওয়া যায়)

·        স্নরকেলিং বা স্কুবা ডাইভিং (প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য দেখার জন্য)

·        সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা

·        স্থানীয় বাজার থেকে শামুক-ঝিনুকের তৈরি হস্তশিল্প কেনা

·        রাতে আকাশভরা তারা ও সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ উপভোগ করা

সতর্কতা

·        সেন্ট মার্টিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত (জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল), তাই চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে নিন

·        জাহাজ সাধারণত শীতকালে চলে  গ্রীষ্মকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ

·        সৈকতে সাঁতার কাটার সময় গভীর জলে না যাওয়া

·        স্থানীয় পরিবেশ (প্রবাল ও কচ্ছপ) নষ্ট করবেন না

·        রাতে অচেনা এলাকায় ঘুরাঘুরি এড়িয়ে চলুন

স্থানীয় সংস্কৃতি

দ্বীপের মানুষ মূলত জেলে, যারা মাছ ধরা ও শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নারকেল ও সামুদ্রিক খাবার এখানে সংস্কৃতির বড় অংশ। স্থানীয়রা অতিথিপরায়ণ, তবে জীবনযাত্রা খুবই সাধারণ। দ্বীপের মসজিদ ও ছোট স্কুলগুলো স্থানীয় জীবনের অংশ। পর্যটকরা গেলে স্থানীয়রা তাদের আতিথেয়তা দিতে ভালোবাসে


০৩। সুন্দরবন - বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন

ইতিহাস

সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। এর নাম এসেছে সুন্দরী গাছ থেকে, যা এ বনের প্রধান বৃক্ষ। এক সময় এখানে আরব বণিকরা লবণ ও মধু সংগ্রহ করত। ব্রিটিশ আমলে সুন্দরবনকে রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হয়
১৯৯৭ সালে
UNESCO সুন্দরবনকে World Heritage Site হিসেবে ঘোষণা করে। এটি কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং জীববৈচিত্র্যের জন্যও বিশ্বে অনন্য

ভূগোল

·        সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার, এর মধ্যে ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশে আর বাকিটা ভারতে

·        বনটির দক্ষিণ দিক বঙ্গোপসাগরে মিশেছে

·        এখানে শতাধিক নদী, খাল, বিল ও খাড়ি রয়েছে

·        প্রধান গাছ: সুন্দরী, গেওয়া, গোলপাতা

·        প্রাণী: রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বন্য শূকর, কুমির, মাছ, পাখি ও নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গ

কীভাবে যাওয়া যায়

সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে হলে মূলত খুলনা, মংলা বা শ্যামনগর থেকে যেতে হয়

·        ঢাকা খুলনা/মংলা বাস (Shohag, Hanif, Green Line), ট্রেন (Sundarban Express, Chitra Express), অথবা বিমান (Jessore পর্যন্ত)

·        খুলনা সুন্দরবন: পর্যটন লঞ্চ, ট্রলার বা স্পিডবোটে চড়ে প্রবেশ করা যায়

·        ভ্রমণ অনুমতি (Forest Department থেকে) নিতে হয়, সাধারণত ট্যুর অপারেটররাই এটি করে দেয়

কোথায় থাকা যায়

সুন্দরবনের ভেতরে থাকার ব্যবস্থা সীমিত। তবে মংলা ও খুলনাতে হোটেল ও রিসোর্ট আছে

·        খুলনা: Hotel Castle Salam, Tiger Garden Hotel

·        মংলা: Pasur Hotel, Mongla Tourist Motel

·        শ্যামনগর (সাতক্ষীরা): লোকাল গেস্ট হাউস
যারা জঙ্গলের ভেতরে ঘুরতে চান, তাদের জন্য পর্যটন লঞ্চে রাতযাপন করার ব্যবস্থা থাকে (ডিলাক্স, ইকোনমি কেবিন)

কী খাওয়া যায়

·        খুলনা-মংলায় জনপ্রিয় পদ: চিংড়ি মাছ, কোরাল, ইলিশ, ডাল, ভাত, শাক-সবজি

·        স্থানীয় মধু, যা সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা হয়, অবশ্যই স্বাদ নিতে হবে

·        পর্যটন লঞ্চগুলো সাধারণত দেশি খাবার রান্না করে দেয়

কী কী করবেন

·        রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল দেখা (চোখে পড়লে সৌভাগ্যবান হবেন)

·        কটকা, কচিখালী, করমজল ইকো পার্ক ঘোরা

·        চিত্রা হরিণ ও কুমির দেখার সুযোগ

·        নদী ও খালে নৌকাভ্রমণ

·        পাখি দেখা (শীতকালে পরিযায়ী পাখির ভিড় থাকে)

·        বনের নিরিবিলি সৌন্দর্য ও নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ

সতর্কতা

·        অনুমতি ছাড়া বনে প্রবেশ করা যায় না

·        লঞ্চে বা বনে সবসময় গাইড/গার্ডের সঙ্গে থাকতে হবে

·        রাতে জঙ্গলে একা ঘোরা বিপজ্জনক

·        খাবার, পানি ও ওষুধ সঙ্গে রাখা ভালো

·        প্রবাল/গাছপালা/প্রাণী নষ্ট করবেন না

·        সবসময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, প্লাস্টিক ব্যবহার কমান

স্থানীয় সংস্কৃতি

সুন্দরবনের আশেপাশে বাস করে জেলে, মৌয়াল ও বনজীবীরা

·        জেলে: মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে

·        মৌয়াল: বনের ভেতরে মৌমাছির চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে

·        বাওয়ালি: কাঠ ও গোলপাতা সংগ্রহ করে
তাদের জীবন অনেক কষ্টসাধ্য এবং প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয়রা পর্যটকদের খুবই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে
 



০৪। সিলেট ভ্রমণ

ইতিহাস

সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এলাকা। মধ্যযুগে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.) ইসলাম প্রচার করতে এখানে আসেন, যার কারণে সিলেটকে আধ্যাত্মিক শহর বলা হয়
ব্রিটিশ আমলে চা বাগানের জন্য সিলেট বিখ্যাত হয়। এখনও দেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান সিলেটেই অবস্থিত

জাফলং, লালাখাল, বিছানাকান্দি ও রতনপুর
- সব জায়গাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়

ভূগোল

·        সিলেট বিভাগ ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত

·        এখানে নদী, পাহাড়, ঝরনা, চা বাগান ও খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ ভূমি রয়েছে

·        জাফলং: পিয়াইন নদীর তীরে, মেঘালয় পাহাড়ের নিচে

·        লালাখাল: নীলাভ পানির নদী, জৈন্তাপুরের কাছে

·        বিছানাকান্দি: খাসিয়া পাহাড় ঘেঁষে পাথরের খনি এলাকা

·        রতনপুর: পাহাড়ি সবুজ ও প্রাকৃতিক ঝরনার মিলনস্থল

কীভাবে যাওয়া যায়

·        ঢাকা সিলেট

·        বাস: Ena, Green Line, Hanif, Shyamoli

·        ট্রেন: Parabat, Upaban, Kalni Express

·        বিমান: Biman Bangladesh, US-Bangla, Novoair

·        সিলেট শহর ভ্রমণ স্পটগুলো

·        জাফলং: ৬০ কিমি, গাড়িতে ২-২.৫ ঘণ্টা

·        লালাখাল: ৩৫ কিমি, গাড়িতে ১.৫ ঘণ্টা

·        বিছানাকান্দি: ২৫ কিমি, গাড়ি/সিএনজি ১ ঘণ্টা

·        রতনপুর: শহর থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিমি দূরে

কোথায় থাকা যায়

সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট আছে:

·        Rose View Hotel

·        Hotel Noorjahan Grand

·        La Vista Hotel

·        Hotel Supreme

·        Grand Sylhet Resort & Spa
জাফলং বা লালাখালের কাছে ছোট ছোট কটেজ/রিসোর্টও পাওয়া যায়

কী খাওয়া যায়

সিলেটের খাবার বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে একটু ভিন্ন স্বাদের

·        সিলেটি সাতকরা গরুর মাংস

·        পাঁচ মিশালি তরকারি

·        বাঁশকপালির তরকারি

·        পাহাড়ি ঝাল ভর্তা

·        চা বাগানের তাজা চা

·        স্থানীয় ঝাল-ঝাল ফিশ ফ্রাই
এছাড়া সিলেট শহরে আধুনিক সব রেস্টুরেন্টও আছে

কী কী করবেন

·        জাফলং: নদীর পাড়ে নৌকাভ্রমণ, ঝর্ণা দেখা, মেঘালয় পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ

·        লালাখাল: নীল-সবুজ পানির নদীতে বোট রাইড করা

·        বিছানাকান্দি: পাথরের নদীতে হাঁটা, পাহাড় ও ঝর্ণা দেখা

·        রতনপুর: প্রাকৃতিক ঝরনা ও পাহাড়ি ট্র্যাকিং

·        সিলেট শহরে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করা

·        চা বাগান ভ্রমণ ও ফটোশুট করা

সতর্কতা

·        বর্ষাকালে নদীর স্রোত অনেক বেশি থাকে, তাই নৌকাভ্রমণে সতর্ক থাকতে হবে

·        পাহাড়ি এলাকায় স্লিপারি পথ থাকে, তাই ভালো জুতা ব্যবহার করুন

·        স্থানীয়দের অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না

·        রোদে ভ্রমণ করলে ছাতা/সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

·        মশারোধী লোশন সঙ্গে রাখুন

·        প্রাকৃতিক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না

স্থানীয় সংস্কৃতি

সিলেটের মানুষ আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত

·        সিলেটি ভাষা এখানে প্রচলিত, তবে সবাই বাংলাও বোঝে

·        পাহাড়ি খাসিয়া উপজাতির মানুষদেরও দেখা যায়, যারা পান চাষ ও হস্তশিল্পে পারদর্শী

·        স্থানীয় উৎসব: বৈশাখী মেলা, সিলেটি ফোক গান, এবং চা বাগানের লোকসংস্কৃতি

·        সিলেটিদের সাথে চা পান ও আড্ডা দেওয়াটা এক বিশেষ অভিজ্ঞতা 


০৫। বান্দরবান

ইতিহাস

বান্দরবান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি পাহাড়ি জেলা। একসময় আরাকান রাজ্যের অংশ ছিল এই অঞ্চল। ১৬শ শতকে আরাকান ও ত্রিপুরা রাজাদের শাসন চললেও পরে ব্রিটিশরা পাহাড়ি এলাকায় প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলে। স্বাধীনতার পর বান্দরবান বাংলাদেশে যুক্ত হয়। এখানে চাকমা, মারমা, ম্রো, বম, খুমি প্রভৃতি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এখনো সংরক্ষিত

ভূগোল

বান্দরবান জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অংশ। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পাহাড়ি জেলা, যেখানে কেওক্রাডং, তাজিংডং, নাফাখুম, বগালেকসহ অনেক প্রাকৃতিক স্থান রয়েছে। কর্ণফুলি, sangu নদীসহ ছোট ছোট ঝর্ণা বান্দরবানের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সবুজ বন, মেঘের আস্তরণ আর পাহাড়ি নদী-ঝরনা বান্দরবানকে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে স্বর্গীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে

কীভাবে যাওয়া যায়

·        ঢাকা থেকে বান্দরবান বাসে যাওয়া যায়। শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, S. Alam ইত্যাদি বাস সার্ভিসে চট্টগ্রাম হয়ে বান্দরবান পৌঁছানো যায়

·        ট্রেনে সরাসরি বান্দরবান যাওয়া যায় না, তবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে বাসে বান্দরবান যেতে হয়

·        ঢাকা থেকে বান্দরবানের দূরত্ব প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার এবং সময় লাগে আনুমানিক ৮-১০ ঘণ্টা

কোথায় থাকা যায়

বান্দরবানে পর্যটকদের জন্য নানা ধরনের রিসোর্ট, হোটেল ও কটেজ রয়েছে

·        হিলসাইড রিসোর্ট

·        হোটেল হিল ভিউ

·        হোটেল বান্দরবান

·        নবপ্রভা রিসোর্ট

·        সরকারি রেস্টহাউসও বুকিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া যায়

কী খাওয়া যায়

বান্দরবানের স্থানীয় উপজাতিদের খাবার ভিন্ন স্বাদের

·        বাঁশের ভেতরে রান্না করা ভাত বা “বানবু রাইস”

·        শুকনো মাছের ঝোল

·        পাহাড়ি মুরগির মাংস

·        স্থানীয় ফল যেমন কলা, আনারস, পেঁপে, আম ইত্যাদি

·        বাঙালি খাবারও হোটেল ও রেস্টুরেন্টে সহজেই পাওয়া যায়

কী কী করবেন

·        নীলগিরি ভ্রমণ: এখানে মেঘের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা যায়

·        বগালেক: পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট হ্রদ

·        নাফাখুম ঝরনা: বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জলপ্রপাত

·        রুমা ও থানচি ট্রেকিং: প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অসাধারণ

·        চিম্বুক পাহাড়: দূর থেকে মেঘ-আবৃত দৃশ্য উপভোগ করা যায়

·        ট্রাইবাল মার্কেট: স্থানীয় সংস্কৃতি ও হস্তশিল্প কেনার জন্য ভালো জায়গা

সতর্কতা

·        ট্রেকিংয়ের সময় গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক

·        ঝরনা বা পাহাড়ি পথে চলার সময় সাবধান থাকতে হবে

·        স্থানীয় উপজাতিদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত

·        প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন টর্চলাইট, ফার্স্ট এইড কিট, হালকা খাবার সঙ্গে রাখা ভালো

·        বর্ষাকালে পাহাড়ি রাস্তা বিপদজনক হতে পারে, তাই ভ্রমণের জন্য শীতকাল বা বসন্ত উপযুক্ত

স্থানীয় সংস্কৃতি

বান্দরবানে ১১টিরও বেশি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। প্রতিটি জাতির নিজস্ব পোশাক, ভাষা, উৎসব ও সংস্কৃতি রয়েছে। বৈসু, সাংগ্রাই, জলপান উৎসব স্থানীয়দের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। তাদের বোনা কাপড়, হাতে তৈরি অলংকার ও হস্তশিল্প বিশেষ আকর্ষণ


০৬। রাঙ্গামাটি

ইতিহাস

রাঙ্গামাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় জেলা। ইতিহাস অনুযায়ী, একসময় এই অঞ্চল আরাকান ও ত্রিপুরা রাজাদের প্রভাবাধীন ছিল। ব্রিটিশ আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হলে রাঙ্গামাটি তার সদর দপ্তর হয়। কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। স্বাধীনতার পর রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়

ভূগোল

রাঙ্গামাটি পাহাড়ি জেলা, চারদিকে ছোট-বড় পাহাড়, সবুজ বনভূমি ও নদী-ঝরনা দিয়ে ঘেরা। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো কাপ্তাই হ্রদ-মানবসৃষ্ট হলেও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। হ্রদের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ আছে, যেখানে নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দারুণ। রাঙ্গামাটির মোট আয়তন প্রায় ৬,০০০ বর্গকিমি, আর এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে

কীভাবে যাওয়া যায়

·        ঢাকা থেকে: সরাসরি বাস (শ্যামলী, হানিফ, এস. আলম, সৌদিয়া) রাঙ্গামাটি যায়। যাত্রাপথে সময় লাগে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা

·        চট্টগ্রাম থেকে: বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে যেতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা

·        ট্রেনে সরাসরি যাওয়া যায় না, তবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে তারপর বাস/মাইক্রোযোগে যাওয়া যায়

কোথায় থাকা যায়

রাঙ্গামাটিতে থাকার জন্য নানা ধরনের হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস আছে

·        পার্জটন মোটেল (বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত)

·        হোটেল সুফিয়া ইন্টারন্যাশনাল

·        হোটেল লেক ভিউ

·        গ্রিন হিল রিসোর্ট

·        কাপ্তাই হ্রদের পাশে ছোট কটেজও পাওয়া যায়, যেগুলো বুকিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া যায়

কী খাওয়া যায়

রাঙ্গামাটির খাবারে উপজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে

·        বাঁশে রান্না করা ভাত ও মাংস

·        শুকনো মাছের তরকারি

·        পাহাড়ি মুরগির ঝোল

·        কাপ্তাই হ্রদের তাজা মাছ

·        আনারস, আম, লিচু, কলার মতো ফল
এছাড়া রাঙ্গামাটি শহরে বাঙালি খাবারের রেস্টুরেন্টও আছে

 কী কী করবেন

·        কাপ্তাই হ্রদে নৌকা ভ্রমণ: ছোট দ্বীপ ঘুরে দেখা, নীরব প্রকৃতি উপভোগ করা

·        ঝুলন্ত সেতু ভ্রমণ: রাঙ্গামাটির আইকনিক স্পট

·        সুবলং ঝরনা: কাপ্তাই হ্রদের ভেতরে নৌকায় করে পৌঁছানো যায়

·        রাজবন বিহার: বৌদ্ধ মন্দির, ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ

·        আদিবাসী মার্কেট: হস্তশিল্প, বোনা কাপড়, হাতে তৈরি গয়না কেনা যায়

·        পাহাড়ি গ্রাম ভ্রমণ: স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারা কাছ থেকে দেখার সুযোগ

 সতর্কতা

·        নৌকা ভ্রমণে সবসময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন

·        পাহাড়ি পথে হাঁটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন

·        স্থানীয় উপজাতিদের ছবি তুলতে চাইলে আগে অনুমতি নিন

·        রাতে খুব বেশি অচেনা জায়গায় বের হওয়া ঠিক নয়

·        বর্ষাকালে হ্রদ ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে

 স্থানীয় সংস্কৃতি

রাঙ্গামাটিতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা, বমসহ বিভিন্ন উপজাতি বসবাস করে। তাদের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, গান, নাচ ও উৎসব রয়েছে। বৈসু উৎসব (চাকমাদের নববর্ষ) এবং সংগ্রাই উৎসব (মারমাদের নববর্ষ) সবচেয়ে জনপ্রিয়। স্থানীয়রা আতিথেয়তায় ভরপুর, আর তাদের হস্তশিল্প ও কাপড় পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়


০৭। মহাস্থানগড়

ইতিহাস

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরী এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার জন্য অন্যতম বিখ্যাত স্থান। এটি প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মৌর্য সম্রাট অশোকের সময় থেকেই এখানে নগর সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। গড়ে ওঠে রাজপ্রাসাদ, মন্দির, দুর্গ ও প্রশাসনিক কাঠামো। ১৯৩১ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে এখানে বহু নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়, যেমন মুদ্রা, পাথরের ফলক, ভাস্কর্য, ব্রাহ্মী লিপি ইত্যাদি। মহাস্থানগড় বর্তমানে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য মনোনীত স্থান

ভূগোল

মহাস্থানগড় বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। করতোয়া নদীর তীরে এই প্রত্ননগরীর আয়তন প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার প্রাচীন নগরীটি একসময় প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল, যার কিছু অংশ এখনো দৃশ্যমান। চারপাশে নদী ও উর্বর সমতলভূমি এ অঞ্চলকে প্রাচীনকালে বাণিজ্য ও কৃষির জন্য উপযোগী করে তুলেছিল

কীভাবে যাওয়া যায়

·        ঢাকা থেকে: বাসে বগুড়া যেতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে (নর্থ বেঙ্গল, শ্যামলী, হানিফ, গ্রিন লাইন ইত্যাদি) বগুড়া শহর থেকে মহাস্থানগড় প্রায় ১৩ কিমি দূরে, সিএনজি বা লোকাল বাসে যাওয়া যায়

·        রাজশাহী থেকে: প্রাইভেট গাড়ি বা বাসে যেতে প্রায় ২ ঘণ্টা লাগে

·        রেলপথে: ঢাকা থেকে সরাসরি বগুড়া পর্যন্ত ট্রেন না থাকলেও শেরপুর বা সান্তাহার স্টেশন হয়ে যাওয়া যায়। সেখান থেকে বাস/সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে মহাস্থানগড় পৌঁছানো যায়

কোথায় থাকা যায়

·        বগুড়া শহরে হোটেল:

·        হোটেল নওরোজ ইন্টারন্যাশনাল

·        মম ইন

·        হোটেল নাজ গার্ডেন

·        হোটেল মমতাজ টাওয়ার

·        পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল: বগুড়া শহরের কাছেই রয়েছে, সাশ্রয়ী মূল্যে থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়
মহাস্থানগড় এলাকায় সরাসরি থাকার ব্যবস্থা সীমিত, তাই শহরে থাকাই সুবিধাজনক

কী খাওয়া যায়

বগুড়ার খাবারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো দই (বগুড়ার দই) এছাড়া:

·        দেশি মাছ ও গরুর মাংসের ঝোল

·        শুঁটকি ও সবজি দিয়ে তৈরি স্থানীয় পদ

·        ভাতের সঙ্গে কাচা মরিচ ও আচার
শহরে আধুনিক রেস্টুরেন্টেও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি খাবার পাওয়া যায়

কী কী করবেন

·        প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখা: মহাস্থানগড় দুর্গপ্রাচীর, রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, গোকুল মেধ (বিহার), ভাসুকি মণ্ডপ

·        মহাস্থানগড় জাদুঘর ভ্রমণ: এখানে পাওয়া ভাস্কর্য, ফলক, শিলালিপি, মুদ্রা ও মৃৎশিল্প সংরক্ষিত আছে

·        গোকুল মেধ ভ্রমণ: ৬ষ্ঠ শতকের একটি প্রাচীন মন্দির, স্থানীয়রা একে বেহুলা লক্ষ্মীন্দর বাসর ঘর বলে

·        করতোয়া নদীর তীর ভ্রমণ: নদীর পাড়ে হাঁটাহাঁটি করলে প্রাচীন নগরীর পরিবেশ অনুভব করা যায়

সতর্কতা

·        প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন স্পর্শ করা বা ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয়

·        বর্ষাকালে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভ্রমণে অসুবিধা হতে পারে

·        স্থানীয় গাইড নিলে ভ্রমণ আরও তথ্যসমৃদ্ধ হয়

·        জাদুঘরে প্রবেশের জন্য টিকিট কিনতে হয়, তাই পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন

স্থানীয় সংস্কৃতি

মহাস্থানগড় ও আশেপাশের এলাকায় মূলত বাঙালি সংস্কৃতির প্রভাব বেশি। তবে প্রাচীনকালে এখানে বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলিম-তিন ধর্মের প্রভাব বিদ্যমান ছিল। স্থানীয় লোককথা, গান ও উৎসবে এই ইতিহাসের ছাপ দেখা যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা নানা গল্প শোনান, বিশেষ করে বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর কাহিনি এখানকার লোকসংস্কৃতির অন্যতম অংশ


০৮। ষাট গম্বুজ মসজিদ (বাগেরহাট)

ইতিহাস

ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্যের একটি অসাধারণ নিদর্শন এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এটি ১৫শ শতাব্দীতে খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন। যদিও নাম ষাট গম্বুজ, বাস্তবে এখানে ৭৭টি গম্বুজ ও ৬০টি স্তম্ভ আছে। মসজিদটি শুধু নামাজ পড়ার স্থানই নয়, বরং প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। সুলতানি আমলে এ অঞ্চলের ইসলাম প্রচার এবং সামাজিক কার্যক্রমে এর বিশেষ ভূমিকা ছিল

ভূগোল

মসজিদটি খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। মসজিদটির গঠন আয়তাকার, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৯ মিটার এবং প্রস্থ ৩৩ মিটার। মোটা দেয়াল ও বহু গম্বুজের কারণে এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগেও অটুট থেকেছে। আশেপাশের এলাকা নদী ও খালঘেরা, যা একসময় নৌ-যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হতো

কীভাবে যাওয়া যায়

·        ঢাকা থেকে

·        বাসে সরাসরি বাগেরহাট যাওয়া যায় (সময় লাগে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা) শ্যামলী, হানিফ, এমভি গ্রীন লাইন ইত্যাদি সার্ভিস চলে

·        ঢাকা থেকে খুলনা ট্রেনে গিয়ে খুলনা থেকে বাস বা সিএনজিতে বাগেরহাট যাওয়া যায়

·        খুলনা থেকে: খুলনা শহর থেকে বাগেরহাট প্রায় ৪০ কিমি দূরে, বাস বা প্রাইভেট কারে এক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছানো যায়

·        বাগেরহাট শহর থেকে: সিএনজি, অটো বা রিকশায় সহজেই মসজিদ এলাকায় পৌঁছানো যায়

কোথায় থাকা যায়

·        বাগেরহাট শহরে

·        হোটেল আকাশ

·        হোটেল ক্লাসিক

·        হোটেল আলমগীর

·        খুলনায়: যারা আরামদায়ক থাকতে চান তারা খুলনায় থাকতে পারেন-হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল, সিটি ইন, হোটেল ওয়েস্টার্ন ইত্যাদি ভালো বিকল্প

·        পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলও খুলনায় আছে, সাশ্রয়ী মূল্যে থাকা যায়

কী খাওয়া যায়

·        বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলের বিশেষ খাবার:

·        চিংড়ি মালাইকারি (বিশেষ করে খুলনার নদীর চিংড়ি)

·        মাছ ভুনা ও শুটকি মাছের বিভিন্ন পদ

·        দেশি মুরগির ঝোল

·        খিচুড়ি ও ইলিশ মাছের ঝোল

·        স্থানীয় মিষ্টান্ন যেমন রসগোল্লা ও চমচমও বেশ জনপ্রিয়

কী কী করবেন

·        মসজিদ ভ্রমণ: মসজিদের প্রতিটি গম্বুজ, মিনার ও খোদাই করা স্থাপত্য উপভোগ করা

·        খান জাহান আলীর মাজার: মসজিদের কাছে অবস্থিত এ মাজারে প্রচুর পর্যটক যান

·        গরিমা মসজিদ ও সিংড়া মসজিদ: আশেপাশে আরও প্রাচীন মসজিদ রয়েছে, ঘুরে দেখা যায়

·        সুন্দরবন সফর: সময় থাকলে বাগেরহাট থেকে সুন্দরবন ভ্রমণের আয়োজন করা যায়

সতর্কতা

·        মসজিদ একটি ধর্মীয় স্থান, তাই ভেতরে প্রবেশের সময় শালীন পোশাক পরিধান করুন

·        ছবি তোলা যাবে, তবে স্থানীয়দের অনুমতি ছাড়া কারও ছবি তুলবেন না

·        গাইড নিলে ইতিহাস ভালোভাবে বোঝা যায়

·        গরমের দিনে ছাতা বা টুপি সঙ্গে রাখুন, কারণ জায়গাটি খোলা মাঠের মধ্যে

স্থানীয় সংস্কৃতি

বাগেরহাট জেলা "মসজিদের শহর" নামে পরিচিত। ইসলামি স্থাপত্য, খান জাহান আলীর সমাজসেবামূলক কাজ এবং স্থানীয় লোকসংস্কৃতি এখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য। মসজিদ এলাকায় নিয়মিত মিলাদ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। স্থানীয় মানুষ অতিথিপরায়ণ, এবং এখানে গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য-পল্লীগীতি, মেলা ও ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে পাওয়া যায়


০৯। আহসান মঞ্জিল (ঢাকা)

ইতিহাস

আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা একসময় ঢাকার নবাব পরিবারের বাসভবন ও প্রশাসনিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মূল ভবনটির নির্মাণ শুরু হয় ১৮৫৯ সালে এবং শেষ হয় ১৮৭২ সালে। এটি নবাব আবদুল গনি তৈরি করেছিলেন তার ছেলে খাজা আহসানুল্লার নামানুসারে। ব্রিটিশ আমলে এখানে বহু রাজনৈতিক বৈঠক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হতো। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠনের সূচনা এখান থেকেই হয়েছিল। স্বাধীনতার পর এটি বাংলাদেশ সরকারের অধীনে আসে এবং বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর ও পর্যটন আকর্ষণ

ভূগোল

আহসান মঞ্জিল ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে, কুমার টুলি ও ইসলামপুর এলাকার সংযোগস্থলে অবস্থিত। পুরো প্রাসাদটি একটি অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজাকৃতির গঠন নিয়ে তৈরি, যার স্থাপত্যে ইউরোপীয় ও মুঘল ধাঁচের সংমিশ্রণ আছে। এর আয়তন প্রায় ৫.৬৭ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। ভবনের সামনে সবুজ প্রাঙ্গণ ও পিছনে বুড়িগঙ্গার জলরাশি এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়

কীভাবে যাওয়া যায়

·        ঢাকা শহরের ভেতর থেকে

·        গুলিস্তান, সদরঘাট বা লালবাগ থেকে রিকশা/অটোতে সহজেই যাওয়া যায়

·        মেট্রো রেল বা সিএনজি ব্যবহার করে ইসলামপুর এলাকায় নেমে রিকশা নিতে পারবেন

·        বাইরের জেলা থেকে

·        ট্রেনে কমলাপুর স্টেশনে নেমে বাস/অটোতে সহজেই পৌঁছানো যায়

·        সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে হেঁটে বা রিকশায় কয়েক মিনিটেই যাওয়া সম্ভব

কোথায় থাকা যায়

ঢাকার মধ্যে যেহেতু এটি অবস্থিত, থাকার জন্য হোটেলের কোনো অভাব নেই

·        লাক্সারি হোটেল

·        হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও

·        দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা

·        র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন

·        মিড - রেঞ্জ

·        হোটেল ৭১

·        ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা

·        বাজেট

·        পুরান ঢাকার কিছু গেস্ট হাউস ও লজ পাওয়া যায়

কী খাওয়া যায়

পুরান ঢাকা খাবারের জন্য বিখ্যাত। আহসান মঞ্জিলে গেলে কাছাকাছি এলাকায় অবশ্যই এসব খাবার ট্রাই করতে পারেন

·        বিরিয়ানি (হাজীর বিরিয়ানি, নান্না বিরিয়ানি)

·        কাবাব, শিক কাবাব, নাহারি

·        মিষ্টান্ন যেমন মটকাদই, রসমালাই

·        ইফতারের সময় (রমজান মাসে) চকবাজার ইফতার বাজার বিখ্যাত

·        স্থানীয় স্ট্রিট ফুড যেমন ফুচকা, চটপটি, দই-ফুচকা

কী কী করবেন

·        আহসান মঞ্জিল জাদুঘর ভ্রমণ: ভেতরে প্রায় ২৩টি গ্যালারি আছে যেখানে নবাব পরিবারের আসবাবপত্র, পোশাক, অস্ত্র, নৌকার মডেল এবং ঐতিহাসিক ছবি প্রদর্শিত হয়

·        ফটোগ্রাফি: বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে প্রাসাদটির দৃশ্য অসাধারণ ফটোস্পট

·        নৌ-ভ্রমণ: নদী থেকে আহসান মঞ্জিলের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ঘাট থেকে নৌকায় উঠতে পারেন

·        পুরান ঢাকার আশেপাশে ঘোরা: লালবাগ কেল্লা, হোসেনি দালান, সদরঘাট একসাথে ভ্রমণ করা যায়

সতর্কতা

·        জাদুঘরে প্রবেশের জন্য টিকেট সংগ্রহ করতে হবে (বাংলাদেশি ও বিদেশিদের জন্য আলাদা ভাড়া)

·        সোমবার ও সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে, তাই ভ্রমণের আগে সময়সূচি দেখে যান

·        জনসমাগম বেশি হয়, তাই মানিব্যাগ ও মোবাইল সাবধানে রাখুন

·        গরমের দিনে সঙ্গে পানি ও হালকা খাবার রাখুন

স্থানীয় সংস্কৃতি

পুরান ঢাকা সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্র। এখানকার মানুষ অতিথিপরায়ণ এবং ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে খুব উৎসাহী। নবাব পরিবারের ইতিহাস স্থানীয়দের মধ্যে আজও আলোচনার বিষয়। চিত্রা উৎসব, ঈদ, পূজা বা পয়লা বৈশাখের সময় পুরান ঢাকা বিশেষভাবে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে


১০। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত (চট্টগ্রাম)

ইতিহাস

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে এটি গড়ে উঠেছে। মূলত চট্টগ্রাম শহরের সমুদ্রভিত্তিক বাণিজ্য, নৌবাহিনী ও বন্দরকে কেন্দ্র করেই পতেঙ্গার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৬০ এর দশক থেকেই এটি স্থানীয়দের কাছে ঘুরতে যাওয়ার একটি প্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, আলোকসজ্জা এবং বিনোদনের ব্যবস্থা যুক্ত হওয়ায় এর পর্যটন গুরুত্ব আরও বেড়েছে

ভূগোল

পতেঙ্গা সৈকত চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী একটি সৈকত, যার পূর্ব পাশে কর্ণফুলী নদীর মোহনা। সৈকতের বালুকাবেলা অপেক্ষাকৃত সরু হলেও এর অবস্থানগত কারণে এটি ভ্রমণকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। সৈকতের চারপাশে কংক্রিটের ব্লক বসানো হয়েছে যাতে ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন না ঘটে। এখান থেকে জাহাজ, ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকা চলাচল সহজেই দেখা যায়

কীভাবে যাওয়া যায়

·        ঢাকা থেকে: ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বাস, ট্রেন বা বিমানযোগে যেতে পারেন

·        বাসে সময় লাগবে প্রায় ৬-৮ ঘণ্টা

·        ট্রেনে ৬-৭ ঘণ্টা

·        বিমানে ১ ঘণ্টা

·        চট্টগ্রাম শহর থেকে: শহরের জিরো পয়েন্ট বা নিউমার্কেট এলাকা থেকে সিএনজি, ট্যাক্সি বা লোকাল বাসে পতেঙ্গা সৈকতে পৌঁছানো যায় প্রায় ৩০-৪০ মিনিটে

কোথায় থাকা যায়

চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন ধরনের হোটেল ও রিসোর্ট পাওয়া যায়। সৈকতের কাছাকাছি কিছু হোটেলও রয়েছে

·        লাক্সারি হোটেল: র‍্যাডিসন ব্লু, হোটেল আগ্রাবাদ

·        মিড-রেঞ্জ: হোটেল লর্ডস ইন, হোটেল দ্য কক্সটুডে

·        বাজেট ফ্রেন্ডলি: বিভিন্ন গেস্ট হাউস ও সস্তা হোটেল পতেঙ্গা ও বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় পাওয়া যায়

কী খাওয়া যায়

পতেঙ্গা সৈকতের পাশে অনেক স্ট্রিট ফুড স্টল ও ছোট রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এখানে প্রধানত সিফুড বিখ্যাত

·        ভাজা ইলিশ, চিংড়ি, কাঁকড়া

·        ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি

·        নারকেল পানি ও ঠাণ্ডা পানীয়
শহরে চাইলে বিভিন্ন প্রকার দেশি-বিদেশি খাবার পাওয়া যায়

কী কী করবেন

·        সৈকতে হেঁটে বেড়ানো ও সূর্যাস্ত দেখা

·        সমুদ্রের ঢেউ ও জাহাজ দেখা

·        ছোট নৌকায় করে ঘুরে দেখা (স্থানীয়দের সাথে ঠিক করে নিতে হবে)

·        ছবি তোলা (সৈকতের কংক্রিট ব্লক ও বাতাসে ওড়া চুল অসাধারণ ব্যাকড্রপ তৈরি করে)

·        ঘোড়ায় চড়া ও আইসক্রিম খাওয়া

·        সন্ধ্যায় আলোকসজ্জা উপভোগ করা

সতর্কতা

·        সৈকতের পানি সাঁতারের জন্য উপযুক্ত নয়, তাই পানিতে নামা এড়িয়ে চলা ভালো

·        ভিড়ের মধ্যে নিজের মূল্যবান জিনিসপত্রের দিকে খেয়াল রাখুন

·        সন্ধ্যার পর নিরাপত্তার জন্য দলবেঁধে ভ্রমণ করুন

·        খাবার খাওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানুন

·        বর্ষাকালে ঢেউ অনেক বড় হয়, তাই সতর্ক থাকুন

স্থানীয় সংস্কৃতি

চট্টগ্রামের মানুষ অতিথিপরায়ণ ও প্রাণবন্ত। স্থানীয় ভাষা "চাট গাঁইয়া" উচ্চারণ ভ্রমণকারীদের কাছে আকর্ষণীয় লাগে। এখানে বাঙালি সংস্কৃতির পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরও প্রভাব রয়েছে। পতেঙ্গায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের জন্য দোকান বসিয়েছে, যেখানে সামুদ্রিক ঝিনুক, শাঁখ, হাতের কাজের জিনিসপত্র ও চট্টগ্রামের বিশেষ খাবার পাওয়া যায়

Post a Comment

0 Comments