উইন্ডোজ ১১ আসার পর থেকে অনেকেই জানতে চায়, আসলে এটা উইন্ডোজ ১০ থেকে এত ভালো কেন। দুইটাই তো দেখতে প্রায় এক রকম, কাজও প্রায় একই, তাহলে পার্থক্যটা কোথায়? আসলে পার্থক্যটা শুধু চেহারায় নয়, ভেতরের কাজ, গতি, নিরাপত্তা, আর ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতায়। উইন্ডোজ ১১ তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যাতে ব্যবহার করা আরও সহজ হয়, দেখতে আরও সুন্দর লাগে এবং আধুনিক ডিভাইসের সাথে আরও ভালোভাবে মানিয়ে যায়।
উইন্ডোজ ১০
অনেক দিন ধরে ভালো কাজ করেছে, কিন্তু প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়েছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
তারও পরিবর্তন দরকার ছিল। উইন্ডোজ ১১ সেই পরিবর্তনটাই এনেছে। প্রথমেই চোখে পড়ে এর
ডিজাইন। আগের চেয়ে অনেক ক্লিন, গোলাকার কর্নার, নতুন আইকন, আর মাঝখানে সাজানো
টাস্কবার - সব
মিলিয়ে মনে হয় একদম নতুন একটা সিস্টেম। কাজ করার সময় চোখে লাগে না, বরং শান্তি
লাগে। অনেকেই বলে, উইন্ডোজ ১১ দেখতে ম্যাকের মতো, কিন্তু ব্যবহার একদম উইন্ডোজের
মতোই সহজ।
আরও একটা বড়
পরিবর্তন এসেছে গতি ও পারফরম্যান্সে। উইন্ডোজ ১১ এমনভাবে অপটিমাইজ করা হয়েছে যাতে
সিস্টেম কম রিসোর্সে দ্রুত কাজ করে। মানে, একই কম্পিউটারে উইন্ডোজ ১০ থাকলে যতটা
সময় লাগত, উইন্ডোজ ১১ ততটাই কাজ করে আরও দ্রুত। বুট টাইম কম, অ্যাপ খোলে দ্রুত,
ব্যাটারি লাইফ বাড়ে। বিশেষ করে ল্যাপটপে এটা আরও ভালো কাজ করে, কারণ এতে
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলোর রিসোর্স ব্যবহার কমানো হয়েছে। ফলে ল্যাপটপ গরম হয় না,
ব্যাটারিও বেশি সময় ধরে চলে।
গেমারদের জন্য
উইন্ডোজ ১১ যেন আশীর্বাদ। এতে এসেছে DirectX
12 Ultimate, Auto HDR, আর DirectStorage - যেগুলো গেম লোডিং টাইম অনেক কমিয়ে দেয়। ফলে হাই গ্রাফিক্স গেম
খেলতেও কোনো ল্যাগ হয় না। উইন্ডোজ ১০-এ গেম চালানো যেত, কিন্তু উইন্ডোজ ১১ তে গেম
খেলার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি স্মুথ। অনেক ইউজার বলেছে, তারা একই গেম উইন্ডোজ ১১ তে
চালিয়ে FPS (Frame
Per Second) বেশি পাচ্ছে।
সিকিউরিটি বা
নিরাপত্তার কথায় আসা যাক। উইন্ডোজ ১১ - এ নিরাপত্তাকে একদম নতুনভাবে সাজানো হয়েছে।
এখনকার সব পিসিতেই TPM
2.0 নামের একটা সিকিউরিটি চিপ থাকতে হয়,
যা হ্যাকারদের থেকে ডেটা সুরক্ষা দেয়। এছাড়া BitLocker, Windows Hello, Secure Boot - এই সব ফিচার এখন ডিফল্ট ভাবে সাপোর্ট করে। এতে তোমার ফাইল,
পাসওয়ার্ড, এমনকি লগইনও অনেক বেশি নিরাপদ। উইন্ডোজ ১০ - এও কিছু নিরাপত্তা ছিল,
কিন্তু উইন্ডোজ ১১ - এ সেটা আরও উন্নত ও বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করা হয়েছে।
এবার আসি
ইউজার ইন্টারফেসে। উইন্ডোজ ১১ এর ডিজাইনটা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে কাজ করা সহজ হয়।
আগের মতো জটিল মেনু, ভারী আইকন এসব কমে গেছে। এখন উইন্ডো টেনে পাশ ঘেঁষে রাখলে ‘Snap Layouts’ নামে নতুন একটা ফিচার আসে - যেখানে তুমি একই স্ক্রিনে ২, ৩ বা ৪টা অ্যাপ একসাথে সাজিয়ে
রাখতে পারো। যারা মাল্টিটাস্কিং করে কাজ করে, তাদের জন্য এটা দারুণ। অফিসের কাজ,
ইউটিউব দেখা, বা একসাথে ফাইল কপি - সব কিছু অনেক সহজ।
স্টার্ট
মেনুতেও এসেছে পরিবর্তন। এখন স্টার্ট মেনুটা মাঝখানে থাকে, দেখতে অনেক গুছানো।
আগের মতো জটিল লাইভ টাইল নেই, বরং পরিষ্কার আইকন দিয়ে অ্যাপগুলো সাজানো থাকে। এতে
নতুন ইউজাররাও সহজে বুঝে নিতে পারে কোনটা কোথায়। সার্চও অনেক দ্রুত হয়েছে। আগে
যেমন সার্চে টাইপ করলেও রেজাল্ট আসতে সময় লাগত, এখন একদম মুহূর্তে আসে।
উইন্ডোজ ১১
উইন্ডোজ ১১ তে
মাইক্রোসফট স্টোরও নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। আগে উইন্ডোজ ১০ এর স্টোরে অনেক অ্যাপ
ঠিকমতো পাওয়া যেত না, আবার ডাউনলোডও ধীরগতিতে হত। এখন নতুন স্টোরে তুমি শুধু
উইন্ডোজ অ্যাপই নয়, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও ব্যবহার করতে পারো (Amazon Appstore এর মাধ্যমে)। মানে, ফোনের অনেক অ্যাপও এখন পিসিতে চালানো যায়,
যা আগে সম্ভব ছিল না।
একটা সময়
উইন্ডোজ ১০ অনেক পুরনো ডিভাইসেও চলে যেত, কিন্তু উইন্ডোজ ১১ একটু নির্দিষ্ট
হার্ডওয়্যার চায়। এটা খারাপ না, বরং ভালো, কারণ এর মানে হলো এটা নিরাপদ এবং নতুন
হার্ডওয়্যারের জন্য পুরোপুরি তৈরি। ফলে যারা নতুন ল্যাপটপ বা পিসি ব্যবহার করে,
তারা পারফরম্যান্সে বিশাল পার্থক্য টের পায়।
আরও একটা
জিনিস যা অনেকেই পছন্দ করেছে, সেটা হলো ভার্চুয়াল ডেস্কটপ। আগে উইন্ডোজ ১০ - এ এই
ফিচার থাকলেও বেশ সীমিত ছিল। এখন উইন্ডোজ ১১ তে তুমি আলাদা আলাদা ডেস্কটপ তৈরি করে
রাখতে পারো - যেমন
একটা অফিসের জন্য, একটা পড়াশোনার জন্য, একটা গেমিংয়ের জন্য। এতে মনোযোগ ধরে রাখা
সহজ হয় এবং কাজ গুছিয়ে রাখা যায়।
আর যারা
ল্যাপটপে টাচস্ক্রিন ব্যবহার করে বা ২ - ইন - ১ ডিভাইস (যেটা ট্যাবলেটেও রূপান্তর হয়) ব্যবহার করে,
তাদের জন্য উইন্ডোজ ১১ অনেক আরামদায়ক। টাচ জেসচার, ভয়েস টাইপিং, পেন ইনপুট -
সবকিছু আরও উন্নত হয়েছে। ভয়েস টাইপিং এত ভালো কাজ করে যে অনেক সময় তুমি কীবোর্ড
ছাড়াই লিখে ফেলতে পারবে।
উইন্ডোজ ১১ তে
আপডেট সিস্টেমও বদলেছে। আগে উইন্ডোজ ১০ এ আপডেট নাম শুনলেই অনেকের ভয় লাগত - কখন
যেন হঠাৎ করে সিস্টেম রিস্টার্ট হয়ে যায়! এখন উইন্ডোজ ১১ তে আপডেট অনেক ছোট এবং
ব্যাকগ্রাউন্ডে হয়ে যায়, ফলে কাজের ব্যাঘাত কম হয়।
উইন্ডোজ ১১ কাস্টমাইজেশনেও এগিয়ে। তুমি চাইলে টাস্কবার, রঙ, থিম, এমনকি আইকনগুলোর আকার পর্যন্ত নিজের মতো বদলে নিতে পারো। ডার্ক মোড অনেক সুন্দর, চোখের আরামদায়ক। রাতে কাজ করলে চোখে কম চাপ পড়ে।
যারা ভিডিও
কনফারেন্স বা অনলাইন ক্লাস করে, তাদের জন্য উইন্ডোজ ১১ তে Teams ইন্টিগ্রেশন যোগ হয়েছে। এখন সরাসরি টাস্কবার থেকেই মিটিং শুরু
করা যায়। এটা উইন্ডোজ ১০ এ ছিল না, তাই অনেক সুবিধা দেয়।
আরেকটা বড়
পরিবর্তন হলো উইন্ডোজ ১১ এর সাউন্ড ও নোটিফিকেশন সিস্টেম। আগের মতো বিরক্তিকর
“পপআপ” নয়, এখন নোটিফিকেশনগুলো আরও শান্ত, সুন্দরভাবে আসে। সাউন্ড ডিজাইনও অনেক
নরম, যা পুরো অভিজ্ঞতাকে আধুনিক করে তুলেছে।
অনেকেই বলে,
“উইন্ডোজ ১০ তো খারাপ না, তাহলে কেন আপগ্রেড করব?” - উত্তর সহজ: উইন্ডোজ ১১ হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি। নতুন
প্রসেসর, নতুন গ্রাফিক্স কার্ড, নতুন SSD - এগুলোর ক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবে কেবল উইন্ডোজ ১১।
উইন্ডোজ ১১
আরও একটা জিনিসে আলাদা - সেটি হলো AI ও ক্লাউড ইন্টিগ্রেশন। উইন্ডোজ ১০ এ কেবল লোকাল অভিজ্ঞতা
পাওয়া যেত, কিন্তু উইন্ডোজ ১১ তে মাইক্রোসফটের ক্লাউড সার্ভিসের সাথে সংযোগ অনেক
গভীর। তোমার সেটিংস, ওয়ালপেপার, অ্যাপ এমনকি ফাইলও ক্লাউডে ব্যাকআপ থাকে। ফলে অন্য
কোনো কম্পিউটারে লগইন করলেই তোমার সবকিছু আগের মতো ফিরে আসে।
উইন্ডোজ ১১ ব্যবহারে মনে হয় যেন সব কিছু এক জায়গায় সাজানো। কাজ, গেম, বিনোদন, পড়াশোনা - সব কিছুর জন্য আলাদা ফিচার আছে। আর পারফরম্যান্সে যেভাবে উন্নতি এসেছে, সেটা প্রতিদিন ব্যবহার না করলে বোঝা যায় না।
সব মিলিয়ে
বলতে গেলে, উইন্ডোজ ১১ হলো এক আধুনিক যুগের অপারেটিং সিস্টেম সুন্দর, দ্রুত,
নিরাপদ এবং ব্যবহার উপযোগী। উইন্ডোজ ১০ ছিল একদম স্থিতিশীল ও জনপ্রিয়, কিন্তু
উইন্ডোজ ১১ সেই জায়গায় নতুন প্রাণ দিয়েছে।
আজকের দিনে,
যখন সবাই চাই দ্রুত কাজ, সহজ ব্যবহার, আর চমৎকার লুক - তখন
উইন্ডোজ ১১ - ই সেই সবকিছু একসাথে দেয়। তাই বলা যায়, উইন্ডোজ ১০ ভালো ছিল, কিন্তু
উইন্ডোজ ১১ আরও ভালো, আরও আধুনিক, এবং ভবিষ্যতের জন্য তৈরি।



0 Comments